তদন্ত তদারক কর্মকর্তার বদলি নিয়ে নানা প্রশ্ন
আপলোড সময় :
০৪-০৬-২০২৪ ১০:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
০৪-০৬-২০২৪ ১০:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন
সংগৃহীত
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্রথম উদঘাটনকারী পুলিশ কর্মকর্তা শাহিদুর রহমান রিপন। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত। হঠাৎ তাকে বদলি করে দেওয়া নিয়ে সবার মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের শনাক্ত করেন শাহিদুর রহমান রিপন। তিনি কয়েক জন আসামিকে গ্রেফতারও করেছেন। হঠাৎ করে তার বদলি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমপি আনারের নির্বাচনি এলাকা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দক্ষ পুলিশ অফিসার শাহিদুর রহমান রিপন এর আগে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা ও বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যুর রহস্যও উদঘাটন করেন।
সংসদ সদস্য হত্যার মতো স্পর্শকাতর ঘটনার তদন্ত তদারকির দায়িত্ব তার ওপর। তাকে হঠাৎ বদলি করে বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব দেওয়াকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকে। তবে পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এডিসি শাহিদুর রহমানের বদলির বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসলে আগেই তার বদলির প্রস্তাব ছিল। এটা গতকাল বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। এই ঘটনার পেছনে অন্য কিছু নেই। এটা ঠিক হয়ে যাবে।’
তদন্তকারী কর্মকর্তার বদলির ঘটনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক হত্যাকাণ্ডের বেলাতেই ঘটেছিল। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কয়েক জন কর্মকর্তা বলেন, এমপি আনার ছাড়াও বহু হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কর্মকর্তাদের হঠাত্ বদলি করা হয়। তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের আসল ঘটনা বেরিয়ে আসার দ্বারপ্রান্তে আসলেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা বদলি হন।
বিষয়টি রহস্যজনক। স্বর্ণ ও অস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক পাচারের পেছনে রয়েছে বড় মাফিয়া গ্রুপ। এপার-ওপারে দুই পাড়েই তাদের অবস্থান। আর যারা সামনে আসে, তারা মূলত বহনকারী। পেছনে আছে ঐ সব গডফাদার। তারা ধরাছোয়ার বাইরে। তারা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সঠিক বিচার যাতে না হয় তার সব কলাকৌশল তাদের জানা।
ঐ অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকারী এক শ্রেণির কর্মকর্তাকে নির্ধারিত হারে মোটা অঙ্কের টাকা দেয় তারা। স্বর্ণ ও অস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক পাচারের টাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক শ্রেণির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই মাফিয়ারা ভদ্রবেশি।
ঐ এলাকার মানুষও তাদের খুব ভালো করে জানে ও চেনে। তবে কেউ মুখ খোলে না। স্বর্ণ চোরাচালানে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশের বাড়ি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। তাদের এক ধরনের সোর্স আছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে যারা তাদের নাম বলছে, সেটি সঙ্গে সঙ্গে তারা জেনে যায়। অনেক সাক্ষীকে হত্যা করেছে তারা।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীনের ফুফাতো ভাই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা গ্রেফতারকৃত শিমুল ভুঁইয়া ওরফে আমান উল্লাহ। সে অসংখ্য খুনের মামলার আসামি। কয়েক দফা গ্রেফতার হয়েছে সে, পরবর্তীতে জামিনে বের হয়েছে। সর্বশেষ তার নেতৃত্বে খুন হয়েছে এমপি আনার।
তার সহযোগী তানভীর ভুঁইয়াও পেশাদার খুনী। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে বর্তমান ও সাবেক কয়েক জন এমপি জড়িত। স্বর্ণ ও অস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক পাচারের সঙ্গেও তারা জড়িত। এলাকাবাসী সবই জানে, তাদের নাম সবার মুখে মুখে। আনার হত্যাকাণ্ডের পর স্বর্ণ-অস্ত্র চোরাচালান ও মাদক পাচারে জড়িত মাফিয়া ও রাজনৈতিক নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, যারা প্রকৃতপক্ষে জড়িত, তাদের কাউকে তালিকার বাইরে রাখব না। অনেকের ব্যবসাবাণিজ্য নেই, মিলকারখানা নেই। বাবা কর্মচারী ছিল, তাদের ছেলে কীভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হন। কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। আগেরও তালিকা আছে, নতুন করে অনেকে বড় ব্যবসায়ী হয়েছেন। অনেকে হুন্ডির ব্যবসাও করছে, তাদের নামও আছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain
কমেন্ট বক্স